কোরআনের রহস্যময় বাদশা জুলকারনাইন

কোরআনের রহস্যময় বাদশা জুলকারনাইন

কোরআনের রহস্যময় বাদশা জুলকারনাইন

সেই সময় ইহুদী এবং ইহুদিরা রাবাইরা মদিনাতে বাস করত এবং মক্কার কুরাইশরা মদিনাতে তাদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় তাদের থেকে জানার জন্য। যে আমরা কিভাবে বুঝবো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেই একজন নবী। তখন রাবাই বলল তাকে মক্কাতে গিয়ে এই তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো কারণ এই প্রশ্নগুলোর জবাব একজন নবী ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না। সেই তিনটি প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল তাকে জিজ্ঞাসা করো ২ সিং বিশিষ্ট সেই ব্যক্তি কে?

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জুলকারনাইন বা দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে ইয়াজুজ ও মাজুজের কথা বর্ণনা করেছেন। তাই আমরাও প্রথমে জুলকারনাইন বা দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তি কে খুজে বের করব। তারপর ইয়াজুজ ও মাজুজ এর বর্তমান অবস্থা ও তাদের বর্তমান পরিচয় প্রমাণ করব।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইহুদিদের জানার এবং জ্ঞানের উৎস কি। নিশ্চিত ভাবেই এটা ছিল তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ অর্থাৎ তাওরাত যা বর্তমান রূপ হচ্ছে তানাখ, হিব্রু, বাইবেল বা অল্ড টেস্টামেন্ট যাকে আমরা বাংলা ভাষায় বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বলে থাকি। জুলকারনাইন কে খুঁজে বের করতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে খুঁজে বের করতে হবে যে বাইবেলের কোথায় অর্থাৎ তানাখের কোথায় দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা বলা আছে। কারণ দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তি টি কে তা মদিনার ইহুদি রাবাইরা ভালো করেই জানত। তা না হলে তারা প্রশ্ন করল কিভাবে এবং আল্লাহ যখন তাদের এ প্রশ্নের জবাব অবতরণ করেন তারা সকলেই তার সঠিক বলে স্বীকার করে নেয়। তারা উত্তর না জানলে জবাবে সত্যতা কিভাবে যাচাই করলো। তাই চলুন আমরা প্রথমেই তানাখ থেকে বের করি সেই দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তি কে ছিল অর্থাৎ জুলকারনাইন কে?

তবে তার আগে সূরা কাহাফের ৮৩ নম্বর আয়াতটি দেখে নেই। মহান আল্লাহ বলেন.
তারা আপনাকে দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন আমি তোমাদের কাছে তার কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। এবার চলুন বাইবেলে ফিরে যাই দেখি বাইবেলের কোথায় জুলকারনাইন শব্দটি কোথায় উল্লেখ করা আছে যার অর্থ দুই শিং বিশিষ্ট ব্যক্তি

শব্দটি মনে রাখবেন এটি বুক অফ ড্যানিয়েলের ২০ নম্বর অধ্যায়ের ৮ নং আয়াত। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ঠিক সেই একই শব্দ জুলকারনাইন আমি প্রথমে অ্যারাবিক বাইবেলের থেকে বলছি যাতে করে আপনারা সবাই দেখে চিনতে পারেন এবং মুছতে পারেন। এই আয়াতটিতে দানিল আলাইহিসসালাম এর একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। আমি একটু পরে পুরো স্বপ্নটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো এবং কোরআনের রহস্যময় বাদশা জুলকারনাইন সর্ম্পকে জানবো

দুই শিষ্ট মিষ্টি হচ্ছে মাটি ও পারস্যের রাজা আর তিনি হলেন সাইরাস আরবি শব্দ জুলকারনাইন কে হিব্রু ভাষায় বা আল-হাক্ক কেলেন আইন বলা হয়। এবার চলুন দেখি একজন ইহুদির আবার কিভাবে এই আয়াতটিকে হিব্রু ভাষায় তেলাওয়াত করে।

অর্থাৎ হে দানিয়েল তুমি স্বপ্নে যে দুটি শিং বিশিষ্ট একটি মেয়ে দেখেছ ওইশিং দুটি হল মাদি ও পারস্য দেশের রাজ্যদ্বয়। তাওরাতে বিভিন্ন জায়গায় সাইরাসকে মেসায়া মাসি বলা হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত এবং বাইরের বিভিন্ন জায়গায় তাকে পবিত্র এবং মহান রাজার সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন ইহুদীরা তাকে এত সম্মান করতো ইনশাআল্লাহ সামনে আলোচনা করা হবে অন্যদিকে গ্রিক সভ্যতা সাইরাসকে একজন আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এলামে সাইরাসের একটি মূর্তির ছবি যা কয়েক দশক আগে আবিষ্কৃত হয়েছে।এলাম হচ্ছে দক্ষিণ ইরানের একটি অঞ্চল যেখানে সাইরাসের জন্ম হয় এবং সেখানে এসে বেড়ে ওঠে এবং সাইরাসের পিঠে দুইটি মেসোপটেমিয়ান ডানা এবং মাথায় আছে দুটি শিং।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তার মাথায় দুটি সিংহ সাইরাস হচ্ছেন ইরান এবং তার আশেপাশে রাজ্যের প্রথম কোন রাজা যিনি পুরো পারস্য এবং লিবিয়া অর্থাৎ বর্তমানে আনাতলিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইরান একই সাথে শাসন করেছেন তাই তার মাথায় সম্মানসূচক প্রতীক হিসেবে দুটি শিং দেখানো হয়। মূলত এটি ইজিপশিয়ান সংস্কৃতির অনুকরণ তাই এটিকে ইজিপশিয়ান ক্রাউন বলা হয় অর্থাৎ মিশরীয় মুকুট।

     সবারআগে বাংলা অনলাইন নিউজ পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাইরাস পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোন রাজা যিনি এত বড় সাম্রাজ্যবাদ শাসন করেছে। বর্তমান পাকিস্তান, আফগানিস্থান, উজবেকিস্তান, তুর্কিস্তান থেকে শুরু করে বর্তমান ইস্তাম্বুল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমরা এখন দেখব তাওরাতে সাইরাস সম্পর্কে কি বলা আছে। প্রথমে বুক অফ আইজায় অধ্যায় ৪৫।

তার মনোনীত রাজা সাইরাসের বিষয়ে প্রভু এই কথা বলেন, আমি প্রভু সাইরাসের ডান হাত ধরব রাজাদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে আমি তাকে সাহায্য করবো। সাইরাসকে নগরদ্বার আটকাবে না আমি ফটো গুলো খুলে দেব এবং সাইরাস প্রবেশ করবে আমি যাব তার সম্মুখে আমি পর্বত কে সমর্থন করে দিব আমি তামা এবং দস্তার ব্রোঞ্জের নগরদ্বার ভেঙে দেবো। যে সব সম্পদ অন্ধকারে রক্ষিত ছিল তা আমি তোমাকে দেব আমি তোমাকে সব গুপ্তধন দিব। আমি এসব করব যাতে তুমি বুঝতে পারো আমি প্রভু আমি ইসরাইল এর প্রভু এবং আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকছি।

এখন পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফের ৮৪ নম্বর আয়াত টি দেখবো। আমি তাকে অর্থাৎ ২ বিশিষ্ট রাজাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম এবং তাকে প্রত্যেক বিষয়ে কার্যোপকরণ দান করেছিলাম।

এখন আসুন আমরা জানি কেন ইহুদিরা সাইরাসকে আপনার সম্মান করতো এবং তাকে তাওয়াতে মেসায়া বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে যখন নাবিওকাত নাজাও বা বখতে নাসর জেরুজালেম আক্রমণ করে হাজার হাজার বনীইসলাইকে হত্যা করে এবং জীবিতদের কে বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যায়।

দীর্ঘ ৭০ বছর ব্যাবিলনের দাসত্বের পর এই সাইরাস ব্যাবিলন স্বাধীন করে সকল ইহুদিদেরকে ব্যাবিলন থেকে এবং ৭০ বছরের দাসত্ব জীবন থেকে মুক্তি দান করে এবং তাদেরকে সম্মানের সাথে আবার বসবাস করার সুযোগ করে দেন এবং সুলাইমান আলাইহিস সালামের মসজিদ কে আবার পুর্ণনির্মাণের জন্য ইহুদীদেরকে তিনি অর্থ এবং লোকবল দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেন।

সাইরাস তার নিজস্ব রাজকোষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেন। যাতে করে মসজিদটি আবার পুনঃ নির্মাণ করা সম্ভব হয়। এই কারণেই ইহুদীরা সাইরাসকে এত সম্মান ও ভালোবাসা এবং তাকে এখনো মেসায়া বলে সম্বোধন করে থাকে।

ওল্ড টেস্টামেন্টের দ্যা বুক অফ ইজ্জাকে প্রথম অধ্যায় বলা আছে পারস্য রাজা সাইরাসের পক্ষ থেকে আসমানের প্রভু আমায় পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য উপহার দিয়েছেন। জেরুজালেমে তার জন্য একটি ঘর নিমার্ণের জন্য তিনি আমাকে নিযুক্ত করেছেন। যদি তোমাদের মধ্যে ইস্বরের কোন লোক অর্থ্যাৎ বনি ইসরাইল বাস করে থাকে তবে তারা যেন জেরুজালামে ফিরে গিয়ে ইজরাইল এর ইস্বর প্রভুর জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে। যেটি জেরুজালেমে আছে। প্রভু তাদেরকে আর্সিবাদ করুন। সমস্ত জায়গায় যেখানে বনি ইসরাইলরা বাস করে তাদেরকে সেখান থেকে অদিভাসীদের সাহায্য করে।

জেরুজালেমে ঈস্বরের ঘর নিমার্ণের জন্য প্রত্যেকে যেন বনিইসরাইলকে সোনা, ‍রুপা গবাদি পশু ও অন্যান্য উপহার দান করে। বুক অফ আইজায়া অধ্যায় ৪৪ ও ৪৫ এ বলা আছে যে প্রভূ সাইরাস কে বলেন তুমি আমার মেস পালক আমি যা চাইবো তুমি তাই করবে। জেরুজালেমকে তুমি বলবে তোমাকে আবার তৈরি করা হবে। জেরুজালেমের ঘরকে তুমি বলবে তোমার ভিতকে আবার গড়ে তোলা হবে। এবার বুক অফ ডেনিয়েল এর ৮নং অধ্যায় এ বর্ণিত –

বেল শেজাদের রাজ্যেতের ততীয় বছরে আমি দানিয়েলের স্বপ্ন দর্ষণ হয়েছিল। এটি ছিল আমার প্রথম স্বপ্ন দর্ষণ হওয়ার পর। এই স্বপ্নে আমি দেখেছিলাম আমি ইলাম প্রদেশের রাজধানী শোসানে ইউলিআই নদীর ধারে দাড়িয়ে আছি। আমি উপরে তাকালাম এবং জুলকারনাইন অর্থ্যাৎ দুই শিং বিশিষ্ট মেশকে ইউলিআই নদীর ধারে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তার দুই শিং লম্বা এবং একটার থেকে অন্যটা বেশি লম্বা এবং লম্বা শিংটি অন্য শিং টির পরে গজিয়েছিল। আমি দানিয়েল দেখলাম মেশটি তার শিং গুলো উচু করে পশ্চিমে, উত্তরে, এবং দক্ষিণে আক্রমন করছে এবং কোন জন্তু তাকে থামাতে পারছে না। অন্য জন্তুকেউ বাচাতে পারলো না, মেশটি ইচ্ছেমতো করতে লাগলো এবং শক্তি শালি হয়ে উঠলো।

আমি দানিয়েল এই স্বপ্ন দর্ষণ করছিলাম এবং তার অর্থ বুঝার চেষ্টা করছিলাম। যখন আমি এই স্বপ্ন দর্ষণের কথা ভাবসিলাম তখন একজন মানুষের মতো দেখতে একজন আমার সামনে দাড়ালো। তারপর আমি ইউলিআই নদীর উপর থেকে একজন মানুষের কন্ঠ শুনতে পেলাম। তারপর লোকটি বললো জিবরাইল তুমি এই লোকটিকে তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দাও। তখন মানুষের মতো দেখতে ফেরেস্তা জিবরাইল আমার কাছে এলো। আমি ভয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম কিন্তু জিবরাইল আমাকে বললো হে মানুষ্য সন্তান বুঝে নাও এই স্বপ্ন দর্ষণ তা হলো শেষ সময় সমদ্ধে। যখন জিবরাইল কথা বলতে শুরু করলো তখন আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম এবং মাটির উপর মুখ থুবরে পড়ে গেলাম। কিন্তু সেই গভীর ঘুম থেকে জিবরাইল আমাকে টেনে তুলে নিজের পায়ে দাড় করালো।

আরও পড়ুন-

এলার্জির ভয়ংকর লক্ষণ এবং তার প্রতিকার

জিবরাইল তখন আমাকে বললো এখন তোমাকে আমি স্বপ্ন দর্ষণ ব্যাখ্যা করবো। তুমি দুই শিং বিশিষ্ঠ একটি মেশ দেখেছো অর্থ্যাৎ সেই মেশ টি হলো মিদিয়া ও পারস্যদ্বয়ের মহান রাজা। পৃথিবীর ইতিহাসে ফাষ্ট গ্লোবাল ইম্পায়ার অর্থ্যাৎ বিশ্ব ব্যাপি সমরাজ্যে। যা প্রতিষ্ঠা করেন দ্যা গ্রেট সাইরাস যেখানে প্রতিটি ধর্মের সন্মান ও সহিঞ্চু ছিল। যেখানে সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্মে পালনে অধিকার ছিল। সেই সময়ে অর্থ্যাৎ ২০০৬ বছর আগে যার উদাহরণ একবারেই বিরল। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০ সালে সাইরাস তার সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে ইলাম হতে যাত্রা শুরু করে বিশ্ব জয়ের উদ্দেশ্য। মাত্র ৩০ বছরে সে বিশাল একটা সমরাজ্যে তৈরি করে যা বিস্তৃত ছিল বর্তমান পশ্চিম ভারতের সিমান্ত হতে উত্তরে ককেসাস অঞ্চল এবং পশ্চিমে ভূমধ্য সাগর।

কোরআনের রহস্যময় বাদশা জুলকারনাইন সর্ম্পকে তাওরাতেও বিস্তারিত বর্ননা করা আছে।

মতামত শেয়ার করুন